তারাপীঠের মহাশ্মশানে প্রখ্যাত সাধকেরা সাধনা করে সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছিলেন । তাই ‘সিদ্ধপীঠ’ নামে অভিহিত হয়েছে বীরভূমের তারাপীঠ। বশিষ্ঠমুনি থেকে শুরু করে সাধক বামাক্ষ্যাপার অলৌকিক কাহিনী বিজড়িত মা তারার এই প্রাঙ্গণ।
কথিত আছে, ব্রহ্মার সপ্তম মানসপুত্র ছিলেন বশিষ্ঠমুনি । তিনি সপ্তর্ষিদের মধ্যে অন্যতম এক ঋষি ছিলেন। বীরভূমের এই তারাপীঠ মহাশ্মশানে পঞ্চমুন্ডির আসনে তিনি মাতৃ আরাধনায় দীর্ঘ তপস্যায় বসেছিলেন। তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে দেবী দূর্গা বশিষ্ঠ মুনিকে দর্শন দেন । মাতৃগর্ভে তাঁর জন্ম হয়নি বলে বর হিসাবে বশিষ্ঠমুনি দেবীকে মাতৃরূপে দর্শন দেওয়ার নিবেদন করেছিলেন। সমুদ্র মন্থনের সময় নীলকণ্ঠ পান করে মহাদেব শিথিল হয়ে পড়েছিলেন। দেবী দুর্গা মা তারা রূপে মহাদেবকে স্তন্যপান করিয়েছিলেন। শুক্লা চতুর্দশীর দিন সেই মা তারা রূপেই বশিষ্ঠমুনিকে দেখা দিয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে এই স্থানের নাম হয় তারাপীঠ । তবে আরও বিভিন্ন মত রয়েছে। বলা হয়, বিষ্ণুর চক্রে সতীর দেহ যখন খণ্ড খণ্ড হয়ে গিয়েছিল, সেই সময় চোখের মণি বা তারা এখানে পড়েছিল। এর বাইরেও আরও পৌরাণিক মত রয়েছে।
মা তারার স্বপ্নাদেশ পেয়ে বনিক জয় দত্ত তারাপীঠের মহাশ্মশানে মা তারার প্রথম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। দ্বারকা নদীর বন্যার জলে সেই মন্দির বারবার ভেঙে যাওয়ার কারনে পরে শ্মশান থেকে কিছুটা দূরে উঁচু জায়গায় নতুনভাবে মন্দির নির্মাণ করে সেই মন্দিরে মা তারাকে অধিষ্ঠিত করা হয়।তারাপীঠের বর্তমান মা তারার মন্দিরটি ১৮১৮ সালে বীরভূমের মল্লারপুরের জমিদার জগন্নাথ রায় নির্মাণ করেছিলেন। এই তারাপীঠ আরও খ্যাতিলাভ করে সাধক বামাক্ষ্যাপার ভক্তি ও অলৌকিক কাহিনী সমূহের মধ্যে দিয়ে। ১৮৩৭ সালে শিবচতুর্দশীর তিথিতে তারাপীঠ সংলগ্ন আটলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বামাচরণ চট্টোপাধ্যায়। ছোট বেলায় তারাপীঠের দ্বারকা নদীর তীরে মহাশ্মশানে তিনি চলে আসেন। সেখানেই সাধনা করে বামদেব মা তারার দর্শন পান এবং সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন । সেই দিনটি ছিল ভাদ্র মাসের কৌশিকী অমাবস্যা। সেই প্রাচীন কাল থেকে আজও এই কৌশিকী অমাবস্যার তিথিতে তারাপীঠ মহাশ্মশানে তন্ত্র সাধনা করতে আসেন বহু তন্ত্রসাধক। অমাবস্যার তিথির নিশিরাতে তারাপীঠের মহাশ্মশানে জ্বলে ওঠে হাজারে হাজারে হোমকুণ্ড। এই বিশেষ দিনে মনস্কামনা পুরনের আশায় মা তারার পুজো দিতে লক্ষ লক্ষ পুর্ন্যার্থি এই সিদ্ধপীঠ তারাপীঠে আসেন।
Leave a Reply